এ নাচাওয়ালা হ্যায় না গায় ওয়ালাআদানি আম্বানি এক লাগতা চ্যালা হ্যায়এ দেশ বেচ রাহা হ্যায়

অমিতাভ সিংহ

ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়েই গেল।যে আশঙ্কাটি রাহুল গান্ধী বছর চারেক আগেই করেছিলেন তা আজ অক্ষরে অক্ষরে সত্যি হয়ে গেল। জম্মু ও কাশ্মীরের তৎকালীন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক গত ১৩ তারিখ বিশিষ্ট সাংবাদিক করন থাপার সঙ্গে একটা ইন্টারভিউতে সেসময় আসলে কি কি ঘটেছিল তা প্রকাশ করে দিয়েছেন।বিশিষ্ট বিজেপি নেতা ও মোদী জমানায় চারটি রাজ্যের রাজ্যপালের দায়িত্ব সামলানো সত্যপাল মালিককে মোদী সরকার একটা টালমাটাল সময়ে উক্ত রাজ্যের রাজ্যপাল হিসাবে রাজ্যের প্রশাসনের মাথার ওপরে বসিয়েছিলেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় সিআরপিএফের কনভয়ে জঙ্গী হামলার ফলে ৪০ জন জওয়ান মারা যান।২৭০০ জন জওয়ান ৭৮ টি গাড়ীর কনভয়ে ৩০০ কেজি আরডিএক্স নিয়ে একটি গাড়ী ঢুকে পড়ে ও বিস্ফোরন ঘটায়।তখন রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছিলেন যে এতবড় কনভয় কাম্য ছিল না।সাধারনতঃ বড় কনভয় হলে তা রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় না।এয়ার লিফট বা প্লেনে করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সেনাদের নিয়ে যাওয়া হয়।তাছাড়া কোন কারণে যদি প্লেনে করে তাদের না নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে রোড স্যানিটাইজার করা অর্থাৎ একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর সেনা চেক পোষ্ট ছাড়াও ঐ রাস্তার আশেপাশে সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে কনভয় নিয়ে যাওয়া।সাধারন মানুষের অসুবিধা হওয়ার কারণে এয়ার লিফট করা হয়। কিন্তু সেসব না করেই কনভয়টি যাত্রা করে।রাহুল গান্ধী এই গাফিলতি সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন।ইন্টারভিউতে সত্যপাল মালিক কি বললেন? করন থাপাকে তিনি বলেন জঙ্গি হামলায় ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান নিহত হওয়ার পর তিনি যখন প্রধানমন্ত্রীকে ফোনে জানালেন যে এই হামলার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের গাফিলতি দায়ী তখন প্রধামমন্ত্রী তাকে এবিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলেন ও বলেন এর মধ্যে আরো অনেক কিছু ব্যাপার আছে ( তুম আভি চুপ রহো,ইয়ে কুছ অউর চিজ বাকি হ্যায়)।এই কুছ অউর চিজ টা কি আমরা তা জানতে চাই।তিনি কি তাহলে জওয়ানদের বলি দিয়েছিলেন ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে জেতবার জন্য?

বেকারত্ব,মূল্যবৃদ্ধি, রাফেল কেলেঙ্কারি ইত্যাদি নিয়ে তখন মোদী জেরবার।তাই কি জাতীয়তাবাদ প্রচারের উদ্দেশ্যে মোদী এই নক্কারজনক কাজ করেছিলেন?

পাকিস্থানকে দায়ী করে বালাকোটে একটা অতি সাধারন হামলা করে এই জাতীয়তাবাদ ইস্যু তুলে ভোটে যাওয়াটাই লক্ষ্য ছিল? সেই হামলায় নাকি কয়েকটি তালগাছ বোমার আঘাতে ঝলসে গিয়েছিল।একজন পাকিস্থানী সেনাও মারা যায় নি।অথচ এনিয়ে নির্বাচনী প্রচারে দেশপ্রেমের ঢাক ঢোল পিটিয়ে বাজিমাত করেছিল বিজেপি।সেসময়ে বার বার এই প্রশ্ন উঠে এসেছিল কেন এয়ার লিফ্ট হল না যখন এই রাজ্যে জঙ্গি হামলার আশঙ্কার খবর কেন্দ্রিয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে ছিল?

ঐদিন দুপুরে করবেট ন্যাশান্যাল পার্কে একটা শুটিং করতে গিয়েছিলেন দুপুর দুটো নাগাদ।ঘন্টা চারেক সেখানে থেকে রামনগর পিডব্লিউডি অতিথিনিবাসে এসে পনীর,ফুলকপির পাকোড়া, ধোকা ও চা খান।এসব করতে করতেই পৌনে সাতটা বেজে যায়।তারপর একটি ধাবা থেকে ফোন করে রাজ্যপালকে জিজ্ঞাসা করেন কি খবর? তখনই নাকি তাকে জঙ্গি হামলার কথা জানানো হয়।যে হামলা ঘটলো দুপুর সওয়া তিনটায় তা প্রধানমন্ত্রী পেলেন সাড়ে তিন ঘন্টা পর।অথচ সেসময় পার্কের মধ্যে মোবাইল সংযোগ ছিল বলেই জানা গেছে। এঘটনার পরেই রাহুল গান্ধী একটি অনুষ্ঠান বাতিল করেন।প্রিয়ঙ্কা গান্ধী সাংবাদিক সম্মেলন বাতিল করেন। আর মোদী একটা সভায় বক্তৃতা করলেন।পাঠকগন বিচার করুন কে জাতীয়তাবাদী?মালিক আরও বলেন যে সিআরপিএফ সেনাদের নিয়ে যাওয়ার জন্যে বিমানে যাওয়ার অনুমতি চাওয়া সত্বেও কেন্দ্রিয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক তা নাকচ করে। যে রাস্তা দিয়ে এই কনভয় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেই রাস্তায় আরো ৮/১০ টি লিঙ্ক রোড ছিল যেখান দিয়ে যেকোন গাড়ী সহজেই কনভয়ের মধ্যে ঢুকে পড়তে পারে।অথচ কোন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি ঐদিন। বন্ধ করা হয়নি ওইসব রাস্তাগুলি।প্রাশাসনিক উদাসীনতার প্রমাণ এটা। ৩০০ কেজি বিষ্ফোরক বোঝাই গাড়ীটি ১০/১২ দিন ধরে কাশ্মীরে ঘুরে বেড়ালেও তা নিয়ে কোন খবর সরকারের কাছে ছিল না। যা এক বড়সড় গোয়েন্দা ব্যর্থতা বলে চিহ্নিত করা যায়।এই গাড়ীটি কনভয়ে এসে সেদিন ধাক্কা মারে।এসব যেমন তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন তেমনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও তার সহপাঠী অজিত ডোভালকেও বলেচিলেন।ডোভালও তাকে মুখ বন্ধ রাখার ও এইবিষয়ে কারো সঙ্গে আলোচনা না করারউপদেশ দেন বলে তিনি জানান। মালিক পরিষ্কার করেন যে তিনি মনে করেন সিআরপিএফের সাথে সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নিরাপত্তা বিষয়ে গাফিলতি ও অকর্মণ্যতাই এজন্য দায়ী।মাত্র পাঁচটি এয়ারক্রাফ্ট দিলে এই দুঃখজনক ঘটনা ঘটতো না।এমনকি তিনি এও বলেছেন তিনি যদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হতেন তবে তিনি এর দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করতেন। করন থাপার সঙ্গে এই ইন্টারভিউতে মালিক স্বীকার করে নিয়েছেন যে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছিল যাতে এর দায় পাকিস্থানের ওপর চাপিয়ে লোকসভা নির্বাচনে তার ফায়দা নেওয়া।বালাকোটে ব্যর্থ হামলা নিয়ে কেউ প্রশ্ন করলে গোদী মিডিয়া তাদের গালি দিত।

মোদী সম্পর্কে তার মূল্যায়ন যে এত কম তথ্য জেনে কিভাবে তিনি কাজ করেন তা তিনি ভেবে পান না। তিনি মোদী সম্পর্কে বলেন যে মোদীর মনোভার হচ্ছে ‘ যা হচ্ছে হোক,বাকি সব ভাঁড়মে যাক,এখন তো মস্তি কর’।

দূর্নীতি নিয়ে মোদীর কোন ঘেন্না নেই

২০১৪ সালে মোদী ক্ষমতায় আসেন “না খায়েগা,না খানে দুঙ্গা” এই স্লোগান দিয়ে।অথচ মালিকের মতে তা এক মিথ্যাচার।তিনি বলেছেন রাজ্যপাল থাকার সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে তার দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং ও আরএসএস নেতা রামমাধব সম্পর্কে কিছু অনিয়মের ঘটনা জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কিছুই করেন নি।পিএম অপিসে বসে নাসিম দ্রার দালালি করত তা কি মোদী জানতেন না?

গোয়ার রাজ্যপাল থাকার সময় সেরাজ্যের সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীর দুর্নীতি সম্পর্কে তিনি মোদীকে জানানো সত্বেও কোন কাজ হয় নি।বরং তাকে তড়িঘড়ি মেঘালয়ের রাজ্যপাল হিসাবে বদলি করে দেওয়া হয়।বিমানের অভাবে বায়ুসেনার ভাঙাচোরা বিমানে তাকে যেতে হয় যা সকালে ছেড়ে বিকালে মেঘালয়ে পৌঁছয়।

তিনি বলেন কাশ্মীরের রাজ্যপাল থাকার সময় একদিন আরএসএস নেতা রামমাধব সকাল সাতটায় রাজভবনে এসে তাকে ৩০০ কোটি টাকার একটা ডিল করার প্রস্তাব দেন।রিল্যায়েন্সের একটি তাপবিদ্যুৎ ও বীমা প্রকল্প ।রামমাধব ছিল তাদের এজেন্ট।তবে তিনি এই ঘুষের প্রস্তাব খারিজ করে দেন।বলেন গলত কাম নেহি করুঙ্গা।সংবিধানের ৩৭০ ধারা সংশোধনের সময় তিনি শেষমুহুর্তে তা জেনেছেন বলে দাবী করেন মালিক। তিনি এটাও বলেন যে এই ধারা বাতিল করতে গেলে সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যপালকে জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের তরফে সম্মতি দেওয়ার কথা।তিনি এও বলেছেন যে কেন্দ্রীয় সরকার এই রাজ্যকে একটা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার ফলে সেখানকার অধিবাসীদের অহমে ঘা পড়েছে।তিনি জানিয়েছেন উক্তরাজ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে এক কোটি টাকা দিয়ে রিয়েল কাশ্মীর নামে একটা ফুটবল দল গঠন করেন।আরোএককোটি টাকা দেয় জম্মু ও কাশ্মীর ব্যাঙ্ক।ঐ দলটি দেশে তৃতীয় শ্রেষ্ঠ দল হিসাবে পরিগণিত হয়।সুতরাং আরেকটু সময় পেলে কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছানো যেত বলে তিনি মনে করেন।মালিক দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রোপদী মুর্মুকে পাপেট বা কাঠপুতলি বলে দেগে দিয়েছেন।তিনি বলেন যে রাস্ত্রপতির কার সঙ্গে দেখা করবেন তাও ঠিক হয় প্রধানমন্ত্রীর অপিস থেকে। একটি উদাহরণ তিনি দেন যে একবার তিনি যখন তার সঙ্গে দেখা করার জন্য মাঝরাস্তায় তখন ফোন আসে যে সাক্ষাতকার বাতিল।তিনি এও মনে করেন আদানি কান্ড এই সরকারের পতন ডেকে আনতে পারে।যদি একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দেওয়া হয় তাহলে আগামী নির্বাচনে বিজেপিকে খুৃঁজে পাওয়া যাবেনা বলে তিনি মনে করেন।সম্প্রতি সংসদে রাহুল গান্ধীকে বলতে না দেওয়া সরকারের একটা বড় ভুল বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন।বিরোধীরা যখন আদানিদের সঙ্গে মোদীর ঘনিষ্ঠতা ও তার ফলে আদানিরা কি কি সুবিধা পেয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তখন একজন প্রধানমন্ত্রীর তার যথাযথ উত্তর দেওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন।অথচ তিনি নীরব থেকে হাঁ অথবা না কিছুই বলছেন না।কিছু অস্বীকারও করেন নি।আসলে তার কিছুই জবাব দেওয়ার নেই কারণ অভিযোগ সত্য।কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ,পবন খেরা,সুপ্রিয়া শ্রীনিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে এইসব ঘটনার জবাব চেয়েছেন।কিন্তু আমরা জানি মোদী কিছুতেই জবাব দেবেন না।আসলে তার জবাব দেওয়ার কিছু নেই। তাই মালিকের কথা অনুযায়ী গ্রাম গঞ্জের বাচ্চারা গান গাইছে

” এ নাচাওয়ালা হ্যায়,না গায় ওয়াল।

অম্বানী আদানি এক লাগতা চ্যালা হ্যায়।

এ দেশ বেচ রহা হ্যায়।।

সৌজন্য : সপ্তাহ

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *