–পার্থ মুখোপাধ্যায়ঃ
ঐতিহ্যপূর্ণ অশোক স্তম্ভ যা সারনাথের বা সাঁচির সংগ্রহালয়ে আমরা দেখেছি। যা আমাদের শাশ্বত ভারতের প্রতীক হিসেবে নেহরু সরকার গ্রহন করেছিলো। সব সরকারি কাজকর্মেই যা ব্যবহ্রত হয়, তা সে কেন্দ্রীয় বা রাজ্য, যে সরকারই হোক। দেশে আপামর মানুষের কাছে আজ এই প্রতীক পরিচিত। কোনো কাগজে এই প্রতীক থাকলে মানুষ সেই কাগজের বিশ্বাস যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন করেন না, অন্তত এমনটাই আমাদের অভ্যাসে পরিনত হয়েছে, বিশ্বাস আর প্রত্যয় থেকে। এই অশোক স্তম্ভে যা আমাদের বিশেষ ভাবে নজর কাড়ে তা ওপরের চারটি বিপরীতমুখি সিংহ এবং নিচের দিকের ২৪ টি স্পোক বা ছোটো দন্ড, যা অশোক চক্র নামে খ্যাত চক্রের কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকের গোলাকার অংশের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে। স্বাধীনতার পর এই চক্রই নীল লোহিত রাঙ্গিত হয়ে আমাদের জাতীয় পতাকার কেন্দ্রে সাদা অংশের ওপর শোভা পায়, পূর্বের পরিকল্পিত চরখার পরিবর্তে। ৩২টি স্পোকের স্তম্ভও আছে কিন্তু নেহরু সরকার ২৪ টি স্পোক সমৃদ্ধ স্তম্ভকেই গ্রহন করেছে বিশেষ প্রতীকী কারনে যা মানুষের দিনের ২৪ ঘন্টা দেশের কাজে নিয়োজিত থাকার অঙ্গীকার।
এবার আসি , যা অশোক স্তম্ভ বলেই গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করলেন পরিকল্পিত নতুন সংসদ ভবনের ওপর স্থাপন করার জন্য। দুটি স্তম্ভের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই প্রাথমিক তুলনামূলক প্রভেদ নজরে আসবেই। বাঁ দিকেরটি শাশ্বত ভারতের পরিচয় বহন করছে, যা তার নিয়তির সঙ্গে অভিসারের বিভিন্নতা সমৃদ্ধ গরিমা এবং রূপের প্রতিফলন, যার প্রধান উপজীব্য হলো বুদ্ধের শান্তির বানী, যা তাকে বিশ্বের শতাধিক দেশের নেতৃত্বে উন্নিত করেছিলো। উল্টোদিকে ডানদিকের বর্তমান ছবিতে পূর্বের প্রতীকের শান্ত সিংহগুলির চেয়ে সরব বিচ্যুতি স্পষ্ট। স্বাধীনতার অমৃতকালে সিংহ মূর্তিগুলির দন্ত বিকশিত আক্রমণাত্মক ভঙ্গি সরব ঘোষনা করছে মোদী সরকারের রূপ। ইতিহাসকেই বদলে দেওয়ার অভীপ্সা বদলে দিলো জাতীয় প্রতীককেও, প্রতীকের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকেও, জাতীয়তাবাদী গরিমাকেও। এরপর পিএম কেয়ার ফান্ডে চিনের দান বাড়লে হয়তো আমরা অশোক স্তম্ভে সিংহের বদলে ড্রগনের মূর্তিও দেখতে পাবো!!!