অনির্বাণ দত্ত
আকাশ কত নীল, জীবন কত সবুজ, ষড়যন্ত্র কত অন্ধকার
হাসতেন তিনি, প্রাণ খুলে হাসতেন। যখন হাসতেন তখন হাজার নয়, লক্ষ ওয়াটের আলো ছড়িয়ে যেত। সেই আলো নিভে গেল এক লহমায়, ১৯৯১ সালের ২১শে মে রাত দশটা বেজে কুড়ি মিনিটের কাছাকাছি, শ্রীপেরুম্বুদূরে। চলে গেলেন এমন একজন মানুষ যিনি অনেক এগিয়ে ছিলেন তাঁর সময়ের থেকে, চিন্তায়, ভাবনায়, আচরণে, কর্মে। ৩১ বছর কেটে গেছে তার পর। গঙ্গা-যমুনা-নর্মদা-কৃষ্ণা-কাবেরী দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল। কিন্তু ভারতবাসীর মনন থেকে মুছে যায় নি সেই লক্ষ ওয়াটের আলো। মুছে যাবে কি করে? আজকের ডিজিটাল ভারতের রূপকার তো তিনিই। যারা তাঁকে হত্যা করেছিল, তারা মুছে দিতে পারে নি তাঁর সেই সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা চিন্তাধারাকে। শুধু পিছিয়ে দিয়েছিল এই দেশকে, এই সমাজকে। আজকের এই চূড়ান্ত অস্থিরতাময় বিশ্বে আপনাকেই তো সব থেকে বেশি প্রয়োজন ছিল, রাজীবজী! আপনার প্রযুক্তিবিদের মানসিকতাই তো আজকে শুধু ভারতবর্ষকে নয়, সারা বিশ্বকে এক নতুন দিশা দেখাতে পারত।
সম্প্রতি মহামান্য সর্বোচ্চ আদালত রাজীবজীর হত্যার ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে অভিযোগে অভিযুক্ত পেরারিভালানের মুক্তির আদেশ দিয়েছেন। আর চার বছর আগেই ২০১৮ সালে তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর পিতার হত্যার ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে অভিযুক্তদের ক্ষমা করে দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন যে তাঁর পিতার হত্যার ঘটনা ভবিতব্যই ছিল। তাই তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে কারুর প্রতি আর তাঁদের রাগ বা দ্বেষ নেই।
ক্ষমা হিন্দু ধর্মে ছয়টি প্রধান গুণের মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়। হিন্দু ধর্মে ক্ষমা করার ধর্মতাত্ত্বিক ভিত্তি হল যে যে ব্যক্তি ক্ষমা করে না সে ভুলের স্মৃতি, নেতিবাচক অনুভূতি, রাগ এবং অমীমাংসিত আবেগের থলি বহন করে যা তাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করে।
কিন্তু….নিজের পিতার হত্যাকারীদের এই ভাবে ক্ষমা করে দেওয়া এত সহজ? আলাদা স্তরের চিন্তাশক্তি আর বিচারধারা না ভিতরে থাকলে এটা সম্ভব? এটা তাঁরা পেরে উঠেছেন কারণ তাঁরাও প্রত্যেকে নিজেদের মননকে উদ্ভাসিত করতে পেরেছেন সেই লক্ষ ওয়াটের আলোয়, যে আলোর নাম রাজীব গান্ধী। ক্ষমা দুর্বলের দুর্বলতা নয়, শক্তিশালীর শক্তি।