আজ থেকে ৩১ বছর আগে,দিনটা ছিল একুশে মে ১৯৯১ সাল।রাত তখন সবে দশটা পেরিয়েছে।তামিলনাড়ুর শ্রীপেরুমেবুদুরের দিনের শেষ নির্বাচনী সভা করতে পায়ে হেঁটে মঞ্চের দিকে জনতার বিপুল অভিনন্দন নিতে নিতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।তিনি রাজীব গান্ধী, দেশের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী, যিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দেশকে একবিংশ শতাব্দীতে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন শুধু তাই নয় আজকের এই ডিজিটাল ভারতের জন্ম দিয়েছিলেন।সেই স্বপ্নাদ্রষ্টা মানুষটির সুন্দর মানুষটির দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল এলটিটিই এর জঙ্গী তেলমোজি রাজারত্নম বা ধানুর মানববোমায়।রাজীব গান্ধী ছাড়াও আরো ডজনখানেকের বেশী সাধারন মানুষ প্রান হারিয়েছিলেন সেদিন।সারা দেশ স্তব্ধ হয়ে চোখের জল ফেলেছিল এমন একজন সৌমদর্শন,বিনয়ী,তরুন এক রাষ্ট্রনতার মৃত্যুতে। তাঁর পুত্র রাহুলের বয়স তখন একুশ পেরোয় নি।আর প্রিয়ঙ্কার বয়স তখন মাত্র উনিশ পেরিয়েছে।এই দুজন মাত্র সাত বছরের ব্যবধানে তাদের পরিবারের সবথেকে প্রিয় দুজনকে হারিয়েছিলেন।বিশেষ টাডা আদালতে রুদ্ধঘরে বিচার হয় এই হত্যার। সুপ্রীম কোর্ট ও টাডা আদালত ২৫ জনকে দোষী সব্যস্ত করে ও তাদের মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়।
সোনিয়া গান্ধীর হস্তক্ষেপে সাতজনের অর্থাৎ এস নলিনী,মুরুগান,সান্থান,এজি পেরারিলাভান,জয়কুমার,রবিচন্দ্রন ও রবার্ট পায়াসের শাস্তি কমে যাবজ্জীবন কারাদন্ড করা হয়।একবার সিঙ্গাপুরে এক প্রশ্নের উত্তরে রাহুল গান্ধী জবাব দিয়েছিলেন পিতার হত্যাকারীদের প্রতি আমারও আমার ভগিনীর এখন বিন্দুমাত্র বিদ্বেষ অবশিষ্ট নেই। এটা ঠিক একসময় আমরা খুব ক্রুদ্ধ ছিলাম,ভেঙে পড়েছিলাম,আঘাত পেয়েছিলাম।২০০৯ সালে তার পিতার মূল চক্রান্তকারী প্রভাকরনের মৃতদেহ টিভিতে দেখে তার প্রতিক্রিয়া চোখে জল এনে দেয়।রাহুল বলেছিলেন ”এতটুকি খুশী হতে পারি নি।আমি নিজে মুদ্রার অপর পিঠটা দেখেছি, তাই জানি দেহটার আড়ালে একটা মানুষ আছে।তার পরিবার আছে।কাঁদতে থাকা তার বাচ্চা ছেলেমেয়েরাও আছে।” আমরা দেখেছি প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা একাধিকবার জেলে নলিনী মুরুগনের সাথে দেখা করেছিলেন।এমনকি শোনা যায় নলিনীর কন্যার লেখাপড়ার দায়িত্বও নিয়েছেন।
অবশেষে ৩১ বছর পর অন্যতম অভিযুক্ত যাবজ্জীবন কারাদন্ডের সাজাপ্রাপ্ত আসামী এজি পেরারিভালন সুপ্রীম কোর্টের বিশেষ অধিকারবলে মুক্তি পেলেন।গত ১০ মে শুনানি শেষ হয়।বেঞ্চের তিন বিচারপতি নাগেশ্বর রাও,এএস বোপান্না ও বিআর বাভাই ভারতের সংবিধানের ১৪২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আজ,বুধবার পেরারিভালনকে মুক্তি দিলেন।উল্লেখ্য তামিলনাড়ু সরকারের মন্ত্রিসভা ২০০৮ সালে তার মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজ্যপালের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁর বিবেচনার জন্য পাঠান। তারপর পেরারিভালন সংবিধানের ১৬১ নং অনুচ্ছেদবলে মুক্তির আবেদন করেন।
কিন্তু এই মুক্তি কতটা সঠিক তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।এজজন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর হত্যাকারীকে যতই মানবিকতার উদাহরণ দিয়ে তার পরিবার ক্ষমা করুন না কেন,দেশের আইন ও পরিস্থিতি বিচার করে এরকম আসামীর মুক্তি দেওয়াটা কি সন্ত্রাসবাদীদের মদত দেওয়া নয়? এর আগেও বিজেপি সরকারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীদের মুক্তি দিতে দেখেছিলাম তাদের মন্ত্রীসভার জনৈক সদস্যের আত্মীয়কে ছাড়াতে গিয়ে।দেশের স্বার্থের কথা না ভেবেই। আসলে যেদল কখনও দেশের স্বাধীনতায় অংশগ্রহন করে নি বা দেশের জন্য দলের কোন নেতা বা কর্মী শহিদ হন নি তারা বুঝবেন কি করে?