সুমন রায় চৌধুরী’র বিশেষ প্রতিবেদনঃ
দুর্নীতি আর তৃণমূল সরকার কি তা’লে পুরোপুরিই সমার্থক হয়ে গেলো? এস.এস.সি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মহামান্য আদালতের অবসার্ভেশনের পর এমনই প্রশ্ন আজ বাংলা জুড়ে।
সামনে এলো এস.এস.সি তে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির নয়া নজির। পরীক্ষায় পাশ তো দূরের কথা, কোনো তালিকাতেই নাম নেই এমন ২২২ জন দিব্যি চাকরি পেয়ে গেছে? অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের নেতৃত্বাধীন কমিটি এমন অনেক তথ্য হাইকোর্টে জমা দিয়েছেন। নষ্ট উত্তরপত্র, জাল সুপারিশের দৌলতে নাম থেকেও নাকি চাকরি পাননি ৬৫০০ জন! উচ্চ প্রাথমিক থেকে নবম-দশম হয়ে একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ব্যপক দুর্নীতির হদিশ পাওয়া গেছে বলেই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে । সেই সাথে যুক্ত হয়েছে গ্রুপ-সি ও ডি শিক্ষাকর্মী নিয়োগে বহুল দুর্নীতির নিদর্শন। এই অবস্থায় ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হওয়ার মতো ব্যাপার আজ।
নিয়মে কারচুপি হয়েছে প্রায় ৩৮১ জনের ক্ষেত্রে । ফৌজদারী আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছেন উচ্চ আদালত প্রাক্তন উপদেষ্টা ও প্রাক্তন চেয়্যারম্যানের ও সচিবের বিরুদ্ধে । মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি থেকে সাধারণ কর্মী সবাই অভিযুক্ত । একজন প্রাক্তন চেয়্যারম্যান সহ পাঁচ জন আঞ্চলিক চেয়্যারম্যানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের সুপারিশ করতেও বাধ্য হয়েছেন উচ্চ আদালত । ঘটনাচক্রে যার তিন জন মহিলা । সব ক্ষেত্রেই ভারতীয় দন্ডবিধির প্রতারণা, জালিয়াতি ও অপরাধের ষড়যন্ত্রের ধারা দেওয়া হয়েছে। এদিকে দুই মন্ত্রী দায় ঠেলাঠেলিতেই মত্ত। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনেরাল বেনিয়মের অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়েও রাজ্য পুলিশের উপরেই আস্থা রাখছেন। তাঁর দাবি সিট গঠন করে তদন্ত প্রক্রিয়া চলুক, অর্থাৎ আরও সময় এবং প্রমাণ যাতে নষ্ট করা যায়। উল্লেখ্য যে সিট আনিস খুনের এখনও হদিশ দিল না তারা কি করে এই বিপুল তছরূপের তদন্ত করবে? এমন প্রশ্নও খুব স্বাভাবিক ভাবে উঠে আসছে। ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআই তদন্তের উপর সাময়িক স্থগিতাদেশ দিয়েছেন, ১৮ মে রায় ঘোষণা হবে। এদিকে নানাবিধ যুক্তি সাজাতে ব্যস্ত রাজ্য সরকার।
কয়লা খাদান কেলেঙ্কারি, বালি খাদান কেলেঙ্কারি, পাথর খাদান কেলেঙ্কারি, সোনা পাচার, গরু পাচার, তোলাবাজি, খুন, চাল চুরি, ত্রিপল চুরি, সিন্ডিকেট ইত্যাদি অভিযোগের সাথে যুক্ত হলো এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির মারাত্মক অভিযোগ।
যে শিক্ষকরা সমাজ গড়ার অন্যতম কারিগর, তাঁরাই যদি দুর্নীতির মধ্যে দিয়ে অনৈতিক ভাবে চাকরিতে নিয়োজিত হয়ে থাকেন ; তবে তা যে সমাজের একেবারে মূলে ঘুণ ধরিয়ে দেবে! এই ভাবনাই আজ মূল আশঙ্কার সৃষ্টি করছে।
( ছবি গুগল থেকে সংগৃহীত)