পার্থ মুখোপাধ্যায়ের বিশেষ প্রতিবেদনঃ
আজ আমাদের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর ৭৮ তম জন্মবার্ষিকী আমরা সারা ভারতবর্ষে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করছি। বিভিন্ন মানুষ প্রয়াত রাজীব গান্ধীর বিভিন্ন কাজগুলিকে স্মরন করছে যা আমাদের দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধ করেছে, শক্তিশালী করেছে। আজ এমন একটি আঙ্গিকে রাজীব গান্ধীর কাজের পর্যালোচনা করবো যেটা নিয়ে অনেক অপপ্রচার ও মিথ্যা ভাষন শুনতে শুনতে অনেকের মধ্যেই একটি সংশয় মনের কোনায় উদ্ভুত হয়েছে যার ফলশ্রুতিতে আমরা আমাদের প্রিয় নেতার একটি বিশেষ কাজের প্রকৃত মূল্যায়ন করিনি বা করতে পারিনি। আরো একটি বিশেষ কারনে এটি উল্লেখযোগ্য যেহেতু এই সময়েই আমাদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে চিন যখন তার নৌবাহিনীর জাহাজ আমাদের আর এক প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরে নোঙ্গর করেছে। আমি বলতে চাইছি ১৯৮৭ সালের২৯শে জুলাই ভারত ও শ্রীলংকার মধ্যে স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তির ব্যাপারে যা নিয়ে প্রয়াত রাজীব গান্ধীর সমূহ সমালোচনা হয়েছে। এমনকি না জেনে ও প্রকৃত ঘটনার অনুপুঙ্খ বিচার ব্যতিরেকে আজও আলোচনার সুযোগ পেলেই প্রয়াত রাজীব গান্ধীর সমালোচনা হয়। এই ক্ষত্রে যে সমালোচনা মূলক ব্যক্তব্যগুলি শোনা যায় তা হলো যে শ্রীলংকার জাতি সমস্যার ব্যাপারে ভারতের নাক গলানোই উচিৎ হয়নি এবং যার ফলে প্রায় ১২০০ ভারতীয় সৈন্য প্রান হারায়।
পূর্বের অবস্থান বদলে ভারত স্বাধীন তামিল রাষ্ট্রের বিরোধিতা শুরু করে ১৯৮০ র দশকে যখন প্রভাকরন বৃহত্তর তামিল ইলমের পরিকল্পনা করে যার মধ্যে ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যও পড়তো। ছাড়াও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে শত্রুদেশ পাকিস্তানকে দূর্বল করার উপলক্ষ ছিল কিন্তু শ্রীলংকা ভারতের বন্ধু দেশ যার সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিবেশী বৃহৎ দেশ হিসাবে ভারতের অঙ্গীকার তখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রাধান্য পায়। এমনকি এক্ষত্রে ভারতের অঙ্গরাজ্য তামিলনাড়ুর মানুষের ভাবাবেগকেও উপেক্ষা করতে হয়েছিল। সেই সময়ে দঃপূর্ব এশিয়ায় আরও একটি ব্যাপার ঘটছিল আর তা হলো এই অঞ্চলে মার্কিন উপস্থিতি, বিশেষ করে শ্রীলংকায়।ভারত শ্রীলংকার শান্তিচুক্তির মধ্যে কি কি ধারা আছে, সেগুলি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না হয়েই রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে সমালোচনা হতে বা হয়। এই শান্তিচুক্তিতে যা যা বলা হয়েছে সেগুলি যদি আমরা দেখি তাহলে এই চুক্তির অন্তর্নিহিত উদ্যেশ্যগুলি পরিস্কার হবে। ঐ চুক্তির ক্লজ 2.16 (B) ধারা মতে এই অঞ্চলের সামুদ্রিক জলসীমায় ভারতীয় নৌবাহিনী ও উপকুল রক্ষী বাহিনীর প্রাধান্য থাকবে যারা শ্রীলংকার নৌসেনাদের সাহায্য করবে যার ফলে এই জলসীমায় মার্কিন নৌবাহিনীর প্রতিপত্তি খর্ব হয়। এই শান্তিচুক্তির ধারাগুলি ছাড়াও রাজীব গান্ধী ও শ্রীলংকার রাষ্ট্রপতি জুলিয়াস জয়বর্ধনের মধ্যে লিখিতভাবে আরও বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যার ফল ছিল খবই সুদূরপ্রসারী। সেই সময়ে ভয়েস অফ আমেরিকার দঃপূর্ব এশিয়ায় সম্প্রচার হতো শ্রীলংকার রাজধানী কলোম্বো থেকে। ঐ একই সময়ে স্বাক্ষরিত আরও একটি কাগজে যে সব সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া হয় তা হলো ক্লজ 2 (IV) অনুযায়ী ২৯শে জুলাই, ১৯৮৭র পর ভয়েস অফ আমেরিকার সেই সম্প্রচার সম্পূর্ন বন্ধ করে দেওয়ার। ঐদিনের পর ভয়েস অফ আমেরিকার সম্প্রচার কলোম্বো থেকে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
এছাড়াও আরও যে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সেইগুলি নিম্নরুপ ;-
১) শ্রীলংকায় সেই উপস্থিত মার্কিন, পাকিস্তানি, ইস্রায়েলি এবং দঃ আফ্রিকার সবরকম সামরিক ও গোয়েন্দা আধিকারিকদের ঐ দেশ ত্যাগ করা,২) শ্রীলংকার সব রকম সামরিক ও বৈদেশিক কার্যকলাপের সিদ্ধান্তগ্রহনের ক্ষেত্রে মার্কিন, চিনা, পাকিস্তানি, ইস্রাইল ও দঃ আফ্রিকার প্রভাব মুক্তকরন।এক্ষেত্রে উল্ল্যেখ্য যে উপরিউক্ত সবদেশগুলিই সেই সময়ে ভারতের শত্রু দেশ হিসেবেই পরিগনিত হতো। এরমধ্যে ইস্রাইল ও দঃ আফ্রিকার সঙ্গে তখনও ভারতের কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়নি, যা পরবর্তীকালে হয়েছে।