নয়াদিল্লি,১২ অগাস্ট’২৩ঃ
লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী এদিন সরাসরি মোদি সরকারকে অভিযুক্ত করে বলেছেন যে, এই সরকার সংসদীয় সমস্ত রীতিনীতি ও ঐতিহ্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে স্রেফ সংখ্যাধিক্যের জোরে সংসদে বিরোধীদের সঙ্গে কোনোরকম আলোচনা না করেই একের পর এক আইন পাস করিয়ে নিচ্ছে। নিজের সাসপেনশন সম্পর্কে বলতে গিয়ে অধীর বাবু বলেন, ” বিচারের আগেই তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলানো হলো”।এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন যে, এই ভাবেই এই সরকার বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার লক্ষে বিরোধী সদস্যদের সংসদ থেকে বহিষ্কারের পথে হাঁটছে। নয়াদিল্লিতে এ আই সি সি দফতরে দলের মিডিয়া ও পাবলিসিটি কমিউনিকেশন বিভাগের চেয়ারম্যান পবন খেরাকে সঙ্গে নিয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে অধীর বাবু এদিন কিভাবে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের আলোচনা চলাকালীনই সমস্ত সংসদীয় রীতিনীতি ও প্রথাকে উপেক্ষা করে একের পর এক বিল ও আইন সংসদে পাস করিয়ে নেওয়া হয়েছে, সে কথাও উল্লেখ করেন।অধীর বাবু আরো উল্লেখ করেন যে, ভারতীয় সংসদে উত্থাপিত ২৮ তম অনাস্থা প্রস্তাব আলোচনার সময় যা ঘটলো, তা ইতোপূর্বে ভারতীয় সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে ঘটেনি। অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ঝুলিয়ে রেখে ২২ টি বিল ও লেজিসলেশনকে পাস করিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। লোকসভা থেকে নিজের সাসপেনশন নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এদিন অধীর বাবু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মন্তব্য করে বলেন যে, ” আমাকে বিচারের আগেই ফাঁসিতে ঝোলানো হলো।” তিনি বলেন তাঁর মতো অন্যান্য বিরোধী সাংসদদের বহিষ্কারের পিছনে সরকারের প্রতিহিংসার রাজনীতি কাজ করছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, সংসদের ভিতর কারো মর্যাদাহানি করার কোনো অভিসন্ধি তাঁর ছিলোনা। এতদসত্ত্বেও তাঁর বলা কোনো বাক্য বা শব্দবন্ধ যদি ‘অসংসদীয় ‘ হয়ে থাকে তবে সেই শব্দকে সভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়ার সম্পূর্ণ অধিকার স্পীকারের আছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। আত্মপক্ষ সমর্থন করে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় সংসদে নিজের বলা বক্তব্যের প্রসঙ্গে এদিন অধীর বাবু বলেন, আমরা আমাদের প্রতিদিনের কথা-বার্তায় এই ধরনের অলংকার প্রয়োগ করেই থাকি। এই সরকার এক নতুন রাজনৈতিক অভিধান চাপিয়ে দিতে চাইছে যেখানে গেরুয়াকরণের ব্যাকরণ সবাই কে মেনে চলতে বাধ্য করানোর চেষ্টা চলছে বলেও অধীর বাবু এদিন বলেন। সরকারি দলের সদস্যরা যা খুশি তা বলতে পারছেন, আর বিরোধী দলের সদস্যদের উপর শাস্তির খাঁড়া নামিয়ে আনা হচ্ছে বলেও অধীর চৌধুরী এদিন অভিযোগ করেন। নিজের সাসপেনশন নিয়ে কি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে অধীর বাবু জানান যে, ব্যাপারটি ভেবে দেখা হচ্ছে। অন্য একটি প্রশ্নের উত্তরে অধীর বাবু জানান, নিজের মন্তব্যের জন্য তিনি ক্ষমা চাইবেন না। যদি তিনি নিজের মন থেকে মনে করেন যে, তিনি কিছু ভুল করেছেন বা আঘাত দিয়েছেন, তবে তিনি ক্ষমা চেয়ে নিতেন। কিন্তু এক্ষেত্রে তিনি এমন কিছু অনুভব করেননি। তাঁর সাসপেনশন সরকারের প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি বলে অধীর বাবু উল্লেখ করেন। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর বাবু বলেন, তাঁরা ভেবেছিলেন শেষ পর্যন্ত সংসদে এসে প্রধানমন্ত্রী মণিপুর নিয়ে কিছু বলবেন। কিন্তু নিজের দু ঘন্টার ম্যারাথন বক্তব্যে মাত্র তিন – চার মিনিট তিনি মণিপুরের জন ব্যয় করলেন, যা হতাশাজনক। অধীর বাবু আরো উল্লেখ করেন, বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবই প্রধানমন্ত্রীকে সংসদে আসতে এবং বক্তব্য রাখতে বাধ্য করেছে। অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে অধীর বাবু বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকার মণিপুরের সঙ্গীণ অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করতে ব্যর্থ হয়েছে। অধীর বাবু উল্লেখ করেন, যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজেই স্বীকার করেছেন যে, কুকি এবং মেইতি এই দুই পরস্পর সংঘর্ষকারী সম্প্রদায়ের মধ্যে ‘বাফার জোন’ তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ‘ ইন্ডিয়া’ শব্দটি নিয়ে অস্বস্তিতে ভুগছেন বলেও এদিন অধীর চৌধুরী কটাক্ষ করেন। অথচ এই প্রধানমন্ত্রীই কখনো ‘ মেক ইন ইন্ডিয়া ‘, কখনো ‘স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া ‘ এসব বলে ‘ইন্ডিয়া ‘ শব্দটিকে ব্যবহার করে এসেছেন সেই তিনিই এখন ‘ ইন্ডিয়া’ থেকে সরে এসে ‘ভারত’ বলতে শুরু করেছেন বলেও অধীর বাবু এদিন বলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইন্ডিয়া’ ই হলো ‘ভারত’।