রেল দুর্ঘটনা এবং মোদি সরকারের মিথ্যাচার

(সৌরভ কুন্ডুর প্রতিবেদন), ৪ ঠা জুন’২৩ঃ

মোদি সরকার যে অপরাধমূলকভাবে রেলওয়ের সংঘর্ষ বিরোধী প্রযুক্তিকে (Anti-Collision Device) উপেক্ষা করেছেন সে বিষয়ে কিছু তথ্য আপনাদের জানাতে চাই :

২০১১-২০১২ সালে, তৎকালীন ইউপিএ – ২ সরকার যখন ক্ষমতাসীন, তখন ভারতীয় রেল “ট্রেন কলিসন এভয়েডেন্স সিস্টেম (TCAS)” টি তৈরি করেছিল। এই ব্যাপারে প্রামাণ্য তথ্য আছে।

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর নিজের ক্রেডিট নেওয়ার জন্য ( যা উনি সমস্ত ক্ষেত্রেই করে থাকেন ) এটির (TCAS) নাম পরিবর্তন করে #Kavach রাখেন।আপনারা শুনে চমকে যাবেন যে এই গুরুত্বপূর্ণ রেল নিরাপত্তা প্রযুক্তি স্থাপন হয়ে যাওয়ার পরে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এটির কোনো অগ্রগতি তো দূরস্থান, কোন সংযুক্তিকরণ পর্যন্ত হয়নি।

অথচ, তখন আরও নতুন ৩টে সংস্হাকে, যারা যথারীতি মোদি ঘনিষ্ঠ তাদের রেলওয়েতে KAVACH তৈরি ও ইনস্টল করার জন্য বিশেষ অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।

এবার এই ঘটনাপ্রবাহ গুলো দেখুন :

আপনারা মোটামুটি ওয়াকিবহাল ভারতীয় রেলওয়ের মোট রুটের দৈর্ঘ্য ৬৮,০৪৩ কিমি। এই পুরো যাত্রাপথে KAVACH বা অ্যান্টি-কলিশন সিস্টেম শুধুমাত্র ১৪৪৫ কিলোমিটার পথে ইনস্টল করা হয়েছে।অঙ্কের হিসেবে বোঝা কঠিন নয় যে এটি ভারতীয় রেলের মোট রেলপথের মাত্র ২ শতাংশ। তাহলে কি দাঁড়ালো যে এখনও পর্যন্ত, প্রায় ৯৮ শতাংশ রুটে আমাদের অত্যন্ত গর্বের ভারতীয় রেলের কাছে কোনো সংঘর্ষ-বিরোধী ডিভাইস বা তদনুরূপ কোন সিস্টেম নেই। অবাক হতে হয় এই ভেবে যে, ভারতীয় রেলওয়ের ৯৮ শতাংশ রুটে এই সংঘর্ষ-বিরোধী ব্যবস্থা বিদ্যমান না থাকলেও মোদি সরকার কিন্তু চমকপ্রদভাবে আরও ‘বন্দে ভারত’ বা হাই-স্পিড ট্রেন চালু করার দিকে মনোনিবেশ করছেন। যার আবার ১০০ শতাংশই ব্যক্তিগতভাবে আমাদের প্রচারসর্বস্ব প্রধানমন্ত্রী মোদি জী উদ্বোধন করে থাকেন ।

দয়া করে একবার ভাবুন, ভারতীয় রেলওয়ের সুবিশাল নেটওয়ার্কে সমানে নতুন উচ্চ গতি সম্পন্ন ট্রেন চালু করা হচ্ছে যেখানে এর ৯৮% রুটে সংঘর্ষ-বিরোধী প্রযুক্তি ছাড়াই রয়েছে !! কতখানি বিপদজনক প্রবণতা!

গত পরশু রাতে ওড়িশার বালাসোরে যে মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনা হল তা’ কিন্তু একটি কার্যকরী সংঘর্ষ বিরোধী ব্যবস্থা দ্বারা অবশ্যই প্রতিরোধ করা যেত বলে অনেকেরই বিশ্বাস । কিন্তু আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন যে প্রকৃত নিরাপত্তা ব্যবস্থার পরিবর্তে মোদি জী ও বিজেপি সরকার বন্দে ভারতের পিআর এবং ফটো-সেশনে অত্যধিক মনোনিবেশ করার কারণে, মাত্র একরাতেই ২৮৮ জনেরও বেশি লোক মারা গেছেন এবং ১০০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

এত মানুষের হায় বিজেপি, প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের লাগবেই কারণ তারা ২০১২ সালে ইউপিএ সরকারের আমল থেকে উপলব্ধ রেল সুরক্ষা প্রযুক্তিকে অপরাধমূলকভাবে উপেক্ষা করেছেন, মানুষের বহুমূল্য জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। এখনও সচেতন না হলে ভবিষ্যতে এরকম ছোট বড় দুর্ঘটনা এড়ানো মুশকিল হবে।

কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর যদি কোন বিবেক, দায়িত্ববোধ এবং লজ্জা অবশিষ্ট থাকে তাহলে এই দুর্ঘটনার নৈতিক দায় নেওয়া উচিত।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *