সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ধ্বংস করে দেওয়া বাবরি মসজিদের জমিতে রাম মন্দির নির্মাণ হচ্ছে – এটাই মোদীর মূল নির্বাচনী অ্যাজেন্ডা

সুশান্ত দাসগুপ্ত

আজ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ৩১ বছর পূর্ণ হচ্ছে। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় অবস্থিত প্রায় ৫০o বছরের প্রাচীন বাবরি মসজিদ এক বিশাল উন্মত্ত জনতা কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতৃত্বে ধ্বংস হয়।স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এই ঘটনা ছিল চূড়ান্ত কলঙ্কজনক। ভারতের কোটি কোটি সহজ সরল ধর্মপ্রাণ মানুষ মহাকাব্য রামায়ণের নায়ক রামচন্দ্রকে ইশ্বর বলে ভক্তি করেন। এই ভক্তি কে কাজে লাগিয়ে হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি দানবীয় প্রচার চালিয়ে এসেছে যে অযোধ্যায় রামচন্দ্রের জন্মস্থানের ওপর বাবরি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। ক্রমাগত এই মিথ্যা প্রচার অবশেষে এক বিরাট সংখ্যক মানুষ বিশ্বাস করেছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে Archaeological Survey of India এরকম কোনো প্রমাণ পায় নি। বিপরীতে এই তথ্য ধর্ম নিরপেক্ষ শক্তি তুলে ধরতে পারেনি।

মধ্যযুগের ভক্তিবাদের কবি তুলসীদাস লোক সাধারণের ভাষা আয়োধি ‘ তে ‘রাম চরিত মানস ‘ লিখে হিন্দি বলয়ের মানুষের কাছে রামায়ণ পৌঁছে দেন। তার আগে সাধারণ মানুষের সংস্কৃত শেখার অধিকার ও পড়ার কোনো সুযোগ ছিলনা।এটি ছিল ব্রাহ্মণের একচেটিয়া অধিকার। তুলসীদাস ছিলেন আকবর বাদশার সময়েরমানুষ। বাদশার সভাসদ ও দুই বিখ্যাত লেখক ও ঐতিহাসিক যথা আবুল ফজল ( আইন- ই-আকবরির রচয়িতা )ও আব্দুর রহিম খান খানান ছিলেন তুলসীর ঘনিষ্ট বন্ধু ও তাঁর সাহিত্যের অনুরাগী।আব্দুর রহিম ছিলেন একজন সুফি সাধক। এঁর রচিত ‘ মদনাষ্টক ‘ কাব্য এখনও হোলির দিন উত্তর ভারতের গোঁড়া ব্রাহ্মণদের অবশ্য পাঠ্য।

তুলসীদাস বা সমসাময়িক অন্যান্য কোনও লেখক বা ঐতিহাসিকের লেখায় অযোধ্যায় তথাকথিত রামমন্দির ভেঙে মসজিদ নির্মাণের কাহিনী পাওয়া যায়না। গত ৯ নভেম্বর ,২০১৯ তারিখে সুপ্রিম কোর্টের মহামান্য প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এর নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ তাদের ‘বিরল’ রায়ে অযোধ্যায় বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমি ‘রামলালা বিরাজমান ‘, বিগ্রহের বলে রায় দিয়েছেন। ‘বিরল’ এই কারণে যে এই রায় দেওয়া হয়েছে যুক্তি ও প্রমাণের পরিবর্তে সংখ্যাগুরুর একাংশের অন্ধ বিশ্বাসকে ভিত্তি করে। এই সাংবিধানিক বেঞ্চের অন্যান্য বিচারকরা ছিলেন পরবর্তী প্রস্তাবিত প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে, ডি অশোকভূষণ , ডি ওয়াই চন্দ্রচুর ও এস আব্দুল নাজির।

এই রায়ের প্রতিলিপিতে এই বিচারপতিদের স্বাক্ষর ছিল না বলে জানা গেছে।এই রায়ের ফলে ২০১০ সালে প্রদত্ত এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়, যাতে এই বিতর্কিত জমি সমানভাবে নির্মোহী আখড়া, রামলালা বিরাজমান (যার প্রতিনিধি একজন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা) ও সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল, তা বাতিল হয়ে গেল।

এই রায়ে বলা হয়েছে কেন্দ্র ৩ মাসের মধ্যে মন্দির তৈরির প্রকল্প তৈরি করবে ও মন্দির তৈরি পরিচালনার জন্য ট্রাস্ট ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠন করা হবে। যদিও এই বিতর্কিত জমির ওপর নির্মোহী আখড়ার দাবি খারিজ হয়ে গিয়েছে, কিন্তু নির্মোহী আখড়ার প্রতিনিধিকে ওই ট্রাস্টের সদস্য করা যেতে পারে বলে রায়ে বলা হয়েছে। এই ট্রাস্টে রাম জন্মভূমি ন্যাসের প্রতিনিধিকে রাখতে হবে। রায়ে বলা হয়েছে মসজিদ তৈরির জন্য সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডকে বিতর্কিত জায়গার বাইরে অযোধ্যায় ৫ একর জমি নিতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৯৩ সালে যে ৬৭ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল সেই জমি থেকে বা রাজ্য সরকার এই ৫ একর জমি অন্যত্র দিতে পারে।

সুপ্রিম কোর্ট বলেছে হিন্দুৱা বিতর্কিত জমির উপর তাদের অধিকার আছে তা প্রমাণ করতে পেরেছে, অন্যদিকে মুসলমানরা এই বিতর্কিত কাঠামোর ওপর তাদের পরিপূর্ণ অধিকার আছে তা কখনই প্রমাণ করতে পারেনি। ১০৪৫ পাতার রায়ে বিচারকরা এই বিতর্কিত জমির ওপর ‘ রাম লালা বিরাজমান ‘ এর অধিকার তা প্রমাণ করার জন্য পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণের কথা বলেছেন। কিন্তু সেক্ষেত্রেও তাঁরা যা বলেছেন, তা তাদের বক্তব্যকে সত্যায়িত করেনি। তাঁরা বলেছেন, ওই বাবরি মসজিদ যা ১৫২৮ সালে সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাকি নির্মাণ করেছিলেন, তার নীচে নাকি অপর একটি দ্বাদশ শতাব্দীর স্ট্রাকচার বা কাঠামোর হদিশ পুরাতাত্ত্বিক খননে আরকিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এ এস আই) পেয়েছে বলে তাদের রিপোর্টে বলেছে। কিন্তু সেটি কোনও হিন্দু মন্দিরের কাঠামো এটাও এ এস আই বলেনি বলেও সুপ্রিম কোর্ট স্বীকার করেছে। তাহলে কিসের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট একথা বলল যে ওই বিতর্কিত কাঠামোর ওপর হিন্দুদের পরিপূর্ণ অধিকার ছিল, তা তারা প্রমাণ করতে পেরেছে। এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট এমন কোনও ইতিহাসের নথি বা সমসাময়িক সাহিত্য ইত্যাদির কথা বলেননি যার দ্বারা প্রমাণিত। হয় যে এই দ্বাদশ শতাব্দীর কাঠামো।

ভেঙেই বাবরি মসজিদ’ নির্মিত হয়েছিল। দ্বাদশ শতাব্দী থেকে ১৫২৮ সাল পর্যন্ত এখানে কাঠামো ছিল ? সেটি কোন সম্প্রদায়ের ? এ বিষয়েও সুপ্রিম কোর্ট নীরব। তবে সুপ্রিম কোর্ট অষ্টাদশ শতাব্দীর একজন জেসুইট মিশনারি জোসেফ টিয়েফেন্থালার , যিনি একজন ভূগোলবিদ ও রবার্ট মন্টগোমারি, যিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর আইরিশ লেখক ও রাজকর্মচারী তাদেরলেখা থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন অযোধ্যাকে বিরাট সংখ্যক হিন্দু রামচন্দ্রের জন্মস্থান বলে মনে করেন (অর্থাৎ বিশ্বাস)। তাঁরা বলেছেন রাম চবুতরা, সীতা রসুই , ভান্ডার প্রভৃতি বাবরি মসজিদ চত্বর থেকে বেশি দূরে নয় এবং সংলগ্নই বলা চলে।

সুপ্রিম কোর্ট একথাও বলেছে ১৫২৮ সালে মসজিদ নির্মাণের পর থেকে ১৮৫৭/৫৮ সাল পর্যন্ত মুসলমানরা ওখানে নামাজ পড়তেন কোনও প্রমাণ মুসলমানরা দিতে পারেনি। আবার রায়ে একথাও বলা হয়েছে এই সময়ই (১৮৫৮) ব্রিটিশ প্রশাসন বাবরি মসজিদে লোহার রেলিং ও পাঁচিল তুলে মসজিদের ভিতরের প্রাঙ্গণ ও বাইরের প্রাঙ্গণ পৃথক করে দেয়। নির্দেশ জারি করা হয়। ভিতরের প্রাঙ্গণে মুসলমানরা নামাজ পড়বে ও মসজিদের বাইরের প্রাঙ্গণে হিন্দুরা পুজোপাঠ করতে পারে। ক্রমাগত একশ্রেণির হিন্দুর মসজিদের ওপর দাবি ও গোলোযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই দেওয়া হয়। তৎকালীন এই সরকারের এই রায়ে এটাই প্রমাণিত হয় না কি যে মুসলমানরা ওই মসজিদে ১৮৫৭ সালের আগেও নামাজ পড়তেন।

সুপ্রিম কোর্ট স্বীকার করেছে ১৯৩৪ সালে ৫০/৬০ জন হিন্দু আবারও মসজিদের ওপর আক্রমণ চালায় ও কাঠামোর ক্ষতিসাধন করে। ব্রিটিশ প্রশাসন তাদের খরচে এই ক্ষতি মেরামত করে এবং এই কাজ করানো হয় একজন মুসলিম কন্ট্রাক্টরকে দিয়ে এবং মুসলমানদের ওখানে নামাজ পড়ার অধিকার বজায় থাকে। এর পরের আক্রমণ হয় ১৯৪৯ সালের ২২ ও ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যবর্তী রাতে। ওই সময় কিছু লোক মসজিদে ঢুকে রাতের অন্ধকারে মূল গম্বুজের নীচের যে ঘর সেখানে ‘রামলালা র বিগ্রহ বসিয়ে দিয়ে আসে। অর্থাৎ রামলালা বিরাজমান হলেন। এর কয়েকদিন আগে থেকেই কিছু ব্যাক্তি মুসলমানদের মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে বাধা দিচ্ছিল। কেননা বাইরের প্রাঙ্গণ অতিক্রম করেই তাদের মসজিদে ঢুকতে হত।

সুপ্রিম কোর্ট তাদের রায় বলেছেন ওই বাধাদান ও মূর্তি স্থাপন ছিল বে -আইনি ও ফৌজদারি অপরাধ ( Criminal Offense)। ১৯৪৯ এর ২৯ ডিসেম্বর ‘রিসিভার’ বসিয়ে মসজিদ ও সংলগ্ন জমি কেন্দ্রের নির্দেশে অধিগ্রহণ করা হয়। রামলালার বিগ্রহ সরিয়ে দেওয়ার যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তা কার্যকর করা হয়নি। কিন্তু মুসলমানদের নামাজ পড়া বন্ধ করে দেওয়া হয়।

১৯৫০ সালে ফৈজাবাদ জেলা দায়রা আদালতে রামলালার মূর্তি রেখে পুজোর আর্জি জানিয়ে দুটি মামলা দায়ের হয়। আদালত অন্তবর্তী নির্দেশে বলে যতদিন মসজিদে প্রার্থনা বন্ধ থাকবে, রামমূর্তি দর্শনেরও অনুমতি নেই। ১৯৮৪ সালে বিশ্বহিন্দু পরিষদ রামমন্দির আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে।

১৯৮৬ সালে ফৈজাবাদ জেলা আদালতের রায় অনুযায়ী খোলা হয় মসজিদের তালা। রামলালা দর্শন শুরু হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে এলাহাবাদ হাইকোর্টে আপিল করে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড ও বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি। সব মামলা একত্রে হাইকোর্টের লখনৌ বেঞ্চে যায়। ১৯৮৯ সালে এই হাইকোর্টের রায়ে বিতর্কিত চত্বরের বাইরে রামমন্দিরের শিলান্যাস হয়। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর করসেবার নামে বিতর্কিত চত্বরে করসেবকদের প্রবেশ। বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ তাদের রায়ে বলেছেন ওই দিন যা হয়েছিল তা আইন ভাঙার খুব বড় ঘটনা। ১৯৪৯ সালে যা হয়েছিল অর্থাৎ রামলালার বিগ্রহ স্থাপন, তাও আইন ভাঙার খুব বড় ঘটনা।

ওই সময়ে থেকেই মুসলমানদের নামাজ পড়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। মসজিদের ওপর হামলা হবে না বলে সুপ্রিম কোর্টকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ৪৫০ বছরের প্রাচীন সৌধ হিসেব করে ধ্বংস করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট বর্তমান রায়ে বলেছে এই অন্যায়ের প্রতিকারের জন্যই তারা মুসলমানদের মসজিদ নির্মাণের জন্য অন্যত্র ৫ একর জমি দিতে বলেছেন। হিন্দুদের আইনজীবীরা মামলা চলাকালীন বলেন, বাবরি মসজিদ ইসলামি রীতি অনুযায়ী নির্মিত হয়নি। সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য তা মানেনি। অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট মসজিদ ভাঙাকে অন্যায় বলা সত্ত্বেও সেখানেই অর্থাৎ মসজিদের জমিতেই মন্দির নির্মাণের নির্দেশ দেয়।এমনকী মন্দির নির্মাণের জন্য গঠিতব্য ট্রাষ্টে সেইসব সংস্থাসমূহকে অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে যাদের সম্পর্কে মসজিদ ভেঙে মন্দির নির্মাণের আন্দোলনে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। কেন ? সুপ্রিম কোর্ট এক্ষেত্রে হিন্দুদের আবেগ ও বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করেছে। আইনানুযায়ী যুক্তি ও প্রমাণাদি এখানে আর বিচার্য থাকেনি।

প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গাঙ্গুলির বক্তব্যমসজিদের নীচে একটি কাঠামো ছিল বলে বলা হচ্ছে। কিন্তু তা মন্দির বলা হয়নি। কেউ দাবি করতে পারবে না যে মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি হয়েছিল। অথচ এখন একটি মসজিদ ভেঙে মন্দির নির্মাণ হবে। কেউ জানেন এ ৫০০ বছর আগে এই জমির মালিক কে ছিল ? যে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে ওই মসজিদ ধ্বংস করা হয় , কোর্টের দায়িত্ব ছিল তা পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দেওয়া। বিচারপতি গাঙ্গুলী প্রশ্ন করেন, যদি তাদের অর্থাৎ মুসলমানদের মসজিদের ওপর কোনও অধিকার নাই থাকে তাহলে তাদের কি করে সরকার মসজিদ নির্মাণের জন্য পাঁচ একর জমি দেয়? সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্ৰাপ্ত বিচারপতি অশোক গাঙ্গুলি বলেছেন বংশ পরস্পরায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ দেখেছেন ওখানে একটি মসজিদ রয়েছে বা ছিল। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এখন সেই জমির উপরে একটি মন্দির নির্মিত হতে চলেছে। আইন ও সংবিধানের একজন ছাত্র হিসেবে আমার পক্ষে এই রায় মেনে নেওয়া কঠিন।’ তিনি বলেন, তাঁদের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে যেখানে নামাজ পড়া হয়, বিশ্বাসীদের বিশ্বাস সেটি একটি মসজিদ এবং এই বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করা যায় না। ১৮৫৬-৫৭ সালে যদি নাও হয় তারপর থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত সেখানে নামাজ পড়া হত, তার প্রমাণ আছে। যখন ভারতীয় সংবিধান প্রণীত হয় (২৬ নভেম্বর, ১৯৪৯) তখনও ওখানে নামাজ পড়া হত। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ‘মসজিদ’ হিসাবে স্বীকৃত এই ধর্মস্থানে নামাজ পড়া ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পালন করা আমাদের সংবিধান অনুযায়ী প্রাপ্ত মৌলিক অধিকার বলে বিচারপতি গাঙ্গুলি উল্লেখ করেন।

কিন্তু আজ একজন মুসলমান কী দেখলেন? তাঁরা দেখলেন শত শত বছরের পুরাতন মসজিদ যা ধ্বংস করা হয়েছে সেখানে এখন কোর্ট মন্দির বানানোর নির্দেশ দিচ্ছে এই সূত্রে যে ওই জমি রামলালার। শত শত বছরের আগের জমির মালিকানা নিয়ে কি সুপ্রিম কোর্ট এই নির্দেশ দিতে পারে। তাঁরা কি ভুলে গেলেন যে যখন সংবিধান প্রণীত হয় তখন ওখানে কী ছিল ? ওখানে মসজিদ ছিল এটা কি জানা কথা নয়? সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের দায়িত্ব ছিল এই অধিকারকে রক্ষা করা। সংবিধান যখন প্রণীত হয় তার আগে ভারতে কোনও গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ছিল না। সংবিধান প্রণীত হবার সময় ওখানে অবশ্যই একটি মসজিদ ছিল। সুদূর অতীতে কোথায় মন্দির, কোথায় মসজিদ, কোথায় বৌদ্ধস্তূপ ছিল তা যদি এখন দেখা শুরু হয় , তাহলে কী অতীত ইতিহাস পুনরুদ্ধার করে তা ধ্বংস করা শুরু হবে ? তিনি বলেন, পুরাণকে কেন্দ্র করে আমরা ইতিহাসের ব্যাখ্যা ও নির্মাণ করতে পারি না। বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে কোনও অগ্রাধিকার বা সুবিধা দেওয়া যায় না বলে বিচারপতি গাঙ্গুলী উল্লেখ করেন।

মসজিদের নীচে একটি কাঠামো ছিল বলা হচ্ছে। কিন্তু তা মন্দির বলা হয়নি। কেউ বলতে পারবে না যে মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি হয়েছিল। অথচ এখন একটি মসজিদ ভেঙে মন্দির নির্মাণ হবে। কেউ জানেন যে ৫০০ বছর আগে ওই জমির মালিক কে ছিল? আমরা নতুন ইতিহাস নির্মাণ করতে পারি না। এটা কোর্টেরও দায়িত্ব নয়। ওখানে মসজিদ ছিল যা ধ্বংস করা হয়েছে এটাই সত্য। যা সবাই জানে। কোর্টের দায়িত্ব ছিল তা পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দেওয়া। বিচারপতি গাঙ্গুলী প্রশ্ন করেন।

যদি তাঁদের অর্থাৎ মুসলমানদের মসজিদের ওপর কোনও অধিকার নাই থাকে তাহলে তাদের কি করে সরকার মসজিদ নির্মাণের জন্য পাঁচ ( ৫) একর জমি দেয়? ওইখানে মসজিদ বানানোর নির্দেশ দিলে যদি চরম বিতর্ক হয় তাহলে ওখানে হাসপাতাল বা স্কুল বা কলেজ বানানো যেত। কোনও মসজিদ বা মন্দিরের প্রয়োজন নেই। বিশ্বহিন্দু পরিষদ বা বজরঙ্গ দল যারা যে কোনও মসজিদ ভাঙতে পারে তারা এখন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করছে বলে বিচারপতি গাঙ্গুলী বলেন। বাবরি মসজিদ ভাঙা ফৌজদারি অপরাধ( Criminal Offence), সুপ্রিম কোর্ট বলেছে। তার জন্য যে বিচার হওয়ার কথা তা হয়েছে কি? ওই মামলায় যে বিচার হয়েছে তা হাস্যক

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *