—অশোক ভট্টাচার্য ( রাজা)’র বিশেষ প্রতিবেদনঃ
১৯৬৯, ১৯ শে জুলাই। যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের পথে এগুলেন তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। অর্ডিন্যান্স জারি করে ১৪ টি ব্যাংকের জাতীয়করণ করা হলো।
এর আগের ইতিহাসটা কি ছিলো তা জানতে হলে বিস্তর অর্থনৈতিক গবেষণার পাতা না ওল্টালেও চলবে। গত শতকের ছয়ের দশকের হিন্দি ও বাংলা সিনেমাগুলোর কাহিনীতে ‘ব্যাংক ফেল’-এর কারণে পারিবারিক ও সামাজিক বিপর্যয়ের ঘটনার উল্লেখ ছিলো চেনা ছবি।
ব্যাংকে তালা পড়া, ব্যাংক কর্মচারীরা কাজ হারাতেন, গ্রাহকেরা তাঁদের গচ্ছিত টাকা খুইয়ে পথে বসতেন। এক কথায় বলা যায়…’ ব্যাংক ফেল পড়া’ একটা সামাজিক ব্যাধির জন্ম দিতে শুরু করেছিলো। এর অন্যতম কারণই ছিলো ব্যাংকগুলির উপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ছিলো না, সবগুলিই ছিলো বে-সরকারি মালিকানাধীন।
যাঁরা ভেবেছিলেন, ইন্দিরাকে ‘গুঙ্গি গুড়িয়া’ বানিয়ে রেখে সরকার চালাবেন, তাঁদের ভুল ধারণা অচিরেই মুখ থুবড়ে পড়লো।
পিতা জওহরলালের সমাজতান্ত্রিক ভারত গড়ার স্বপ্ন তখন ইন্দিরার মননে গেঁথে গ্যাছে। ঘরে-বাইরে প্রবল বাধার সামনে পড়লেন ইন্দিরা। কংগ্রেসের ভিতর থেকে বাধা আসলো প্রবল। কিন্তু কংগ্রেস মানে তো কতিপয় সিন্ডিকেট নেতা নয় কোনোদিনই। কংগ্রেস মানে, প্রথমত মানুষ, দ্বিতিয়ত মানুষ, শেষ পর্যন্ত মানুষ। ইন্দিরাও তাই ভারতবর্ষের কোটি কোটি মানুষের স্বার্থে ‘রাজন্যভাতা বিলোপ ‘ এবং ‘ ব্যাংক জাতীয়করণ ‘- এর মতো বলিষ্ঠ-দৃপ্ত সিদ্ধান্ত নিতে দু’বার ভাবলেন না।
বে-সরকারি ব্যাংক ব্যবস্থার ফলে দেশের মানুষের রক্ত-জল করা অর্থ ও সম্পদের সিংহভাগই চলে যাচ্ছিলো বেসরকারি পুঁজির হাতে; জহরলাল নেহরু যে সমাজতান্ত্রিক ভারতের স্বপ্ন এঁকেছিলেন সেই ভারতে এমনভাবে দেশের মানুষের অর্থ- সম্পদ কতিপয় বৃহৎ পুঁজির হাতে থেকে যাবে, ইন্দিরাও তা মানতে পারলেনই না। অতঃপর ১৯৬৯ সালে ১৯ জুলাই ১৪ টি এবং ১৯৮০ সালে আরো ছ’টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের জাতীয়করণ হলো।
এ বিষয়ে মোরাজজি দেশাইয়ের সাথে ইন্দিরাজির বিরোধ সর্বজনবিদিত। মোরাজজি র মূল কথা ছিলো ব্যাংক জাতীয়করণ না করেই সামাজিক ভাবে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা। ঠিক এখানেই আমাদের আলোচনা আজ। ইন্দিরা বুঝলেন, মোরাজজি দেশাই অর্থমন্ত্রী থাকলে ব্যাংক জাতীয়করণ করা কখনোই সম্ভব হবে না, তিনি দেশাইয়ের হাত থেকে অর্থমন্ত্রক কেড়ে নেওয়ার কঠোর সিদ্ধান্ত নিলেন স্রেফ দেশের মানুষের স্বার্থেই।
আজ সেই ব্যাংক জাতীয়করণের ৫৪ বছরে পা দিয়ে দ্যাখার বিষয় এই যে, দেশের মানুষের স্বার্থে দেশের মানুষের রক্ত-জল করা অর্থ-সম্পদ কতিপয় বৃহৎ পুঁজির হাত থেকে কেড়ে নিয়ে, দেশের সম্পদ করেছিলো ইন্দিরার নেতৃত্বে কংগ্রেস। আজ ৫২ বছর পরে সেই দেশীয় সম্পদ’কেই আদানি-আম্বানীদের মতো প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বৃত্তের কতিপয় বৃহৎ পুঁজির হাতে তুলে দিচ্ছেন আজকের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি…নীরব মোদি কান্ডের পর থেকেই গুজরাতের ‘চতুর বানিয়া’রা ইনিয়ে বিনিয়ে সরকারি ব্যাংক বেসরকারিকরণের কথা বলে চলেছে।