জওহরলাল ও সার্বিক উন্নয়ন

আজ পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর ১৩৩ তম জন্মবার্ষিকী। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী মহাত্মা গান্ধির উত্তরাধিকারী জওহরলাল বহু বছর ধরেই হিন্দুত্ববাদী সংঘ পরিবারের প্রধান লক্ষ্যবস্তু ।কমিউনিস্টদের একাংশ একসময় সেই সুরে সুর মিলিয়েছিলেন।রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হ্যারল্ড ল্যাক্সি তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, সমসাময়িককালের বিশ্বে সবচেয়ে উদ্যোগী জননেতা।

প্রজাতন্ত্রী ও গণতন্ত্রী সংবিধান প্রনোয়ন,ধর্মনিরপেক্ষতা,পরিকল্পিত উন্নয়ন,জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি,বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল তাঁর চিন্তার ফসল।তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠান গড়ার মনোযোগী কারিগর।যোজনা কমিশন ,সমষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প,ভাখরা নাঙ্গাল ও হীরাকুন্দ বাঁধ, ডি.ভি.সি, অ্যাটোমিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট, টাটা ইনস্টিটিউট ফর ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ,মহাকাশ ও পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র, দুর্গাপুর, বোকারো, ভিলাই,রউলকেল্লা ইস্পাত, রাঁচি হেভি ইঙ্গিনীয়ারিং,ভেল, চিত্তরজন লোকোমোটিভ,আইআইটি ,আইআইএম,এআইএমএস, আইএসআই,জাতীয় পারমানবিক শক্তি কমিশন, সাহিত্য একাডেমী,হ্যালএনটিপিসি,এনএইচপিসি,শিপিং কর্পোরেশন আরও কত কিছুইনা পণ্ডিত নেহরুর চিন্তা ও দূরদর্শিতার পরিচয় বহন করছে।তিনি এগুলিকে বলতেন ‘ টেম্পলস অফ মডার্ন ইনডিয়া ‘ বা আধুনিক ভারতের মন্দির। তা্র সময় ও পরবর্তীকালে কংগ্রেসের তৈরী দেশের স্বয়ম্ভর অর্থনীতির ভিত্তি এই বিশাল রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পগুলিকে এখন পুঁজিপতিদের তল্পিবাহকরা জলের দরে কর্পোরেট পুঁজির হাতে তুলে দিচ্ছে।পন্ডিত নেহরু যা সৃষ্টি করে গিয়েছেন সেগুলিকে এক এক করে ধ্বংস করাই এখন এই হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রধান কাজ।

পণ্ডিত নেহরুর সময় কোনও মসজিদ ধূলিস্যাৎ হয়নি, ‘মন্দির ওহি বানায়েঙ্গে’ বলে কেউ সারা দেশে দাঙ্গা বাঁধাতে পারেনি।তিনি যা করেছেন গণতান্ত্রিক উপায়ে, অধিকাংশের সম্মতির ভিত্তিতে,সংবিধান মেনে।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যেসব দেশ স্বাধীন হয়েছে, ভারতই তার মধ্যে একমাত্র দেশ যেখানে এখনও প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবহমান।পণ্ডিত নেহরুর স্বপ্নের ফসল।কেউ একজন লিখেছিলেন ওঁর মাথায় ‘গান্ধিটুপি’ যেমন মানায় তা আর কারোর মাথায় মানায় না।গান্ধিজির সচিব মহাদেব দেশাই বলেছিলেন ওঁর চরকা থেকে শুধু সরু সুতোই বের হয়।জেলখানায় ওঁর প্রায় ১০ বছর সময় কেটেছে।কারাজীবনে তিনি ‘ গ্লিম্পসেস অফ ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি ‘, ‘ অটোবায়োগ্রাফি ‘, ‘ ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া ‘র মতন বই লিখেছেন যা বিশ্বসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। কবিগুরু ওঁকে সম্বোধন করেছিলেন ‘ঋতুরাজ’ বলে।তাঁর ১৩৪ তম জন্মদিনে অন্তরের শ্রদ্ধা জানাই।

অমিতাভ সিংহ

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *