হে পার্থ! ———————

মণিপুরি রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদা

বিয়ের আগে

তোমাকে শর্ত দিয়েছিলো

তার গর্ভজাত সন্তান মণিপুরের রাজ্যপাট ছেড়ে

কখনও যাবে না তোমার সাধের হস্তিনাপুরে ;মেনে নিয়েছিলে তুমি!

তাই

তোমার ঔরসে চিত্রাঙ্গদার গর্ভে জন্ম নেওয়া

বভ্রুবাহন যায়নি কুরুক্ষেত্র ময়দানে!

মহাকাব্যিক উঠোন পার হয়ে

আজ হাজার বছর পর

কুরুক্ষেত্র যখন হামাগুড়ি দিয়ে উঠে এসেছে

মণিপুরের চাতালে

তখন তুমি কী করবে তৃতীয় পান্ডব?

তুলে নেবে গাণ্ডীব?

নাকি সম্মুখ সমরে স্বজনের

ভীড় দেখে ফিরিয়ে নেবে মুখ?

আর তোমাকে উজ্জীবিত করতে

আমাদেরকে প্রতীক্ষা করতে হবে

আবারও কোনো এক কৃষ্ণের?

তোমার চিত্রাঙ্গদা

হাতজোড় করে ভিক্ষা চাইছে

প্রাণ তোমার চিত্রাঙ্গদা অসহায় গলায় ভিক্ষা চাইছে

ইজ্জত তোমার চিত্রাঙ্গদা পায়ে ধরে

ভিক্ষা চাইছে সম্ভ্রম ;

উত্তরে নিষ্ঠুর হাসির সঙ্গে ভেসে আসছে

ধর্ষকদের মিলিত কন্ঠস্বর —
“বাঁচবি যদি তো কাপড় খোল্ মাগী!”

খুলেছে!

কাপড় খুলতে বাধ্য হয়েছে

ওই মেয়েটি

—যে মেয়েটি চার বছরের

সন্তানের মাযে মেয়েটি জান বাজি রেখে

কারগিল যুদ্ধে লড়ে যাওয়া

সৈনিকের বউ যে মেয়েটি

সনাতনী ভারতবর্ষের বুকে শুধুই এক নারী!

তারিয়ে তারিয়ে গরম নিশ্বাসের সঙ্গে

মেয়েটির নগ্নতা উপভোগ করছে হাজার মানুষ,

পালা করে মিটিয়ে নিচ্ছে আদিম প্রবৃত্তি,

মোবাইলে অস্পষ্ট করে দেওয়া

ছবিতেও উৎসুক চোখ খুঁজে বেড়াচ্ছ

এক ধর্ষিতা নারীর রক্তাক্ত গোপনাঙ্গ!

নগ্নতার সংক্রমণ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছেম

ণিপুর থেকে মালদাকটক

থেকে কলকাতা নাগাল্যান্ড

থেকে নদীয়া

;সারা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে

ধর্ষিতা নারীর ছিন্নভিন্ন যৌনাঙ্গের রক্ত ;

ঝনঝন করে ভাঙছে

মহাকাব্যিক ভারতবর্ষের অহংকারী ঐতিহ্য!

ঝেড়ে ফেলো সব

দ্বিধাদ্বন্দ্ব মুছে দাও

সকল জড়তা

যুগে যুগে দেশে দেশে

গ্রাম গঞ্জ শহর নগর মাঠে ময়দানে

লাঞ্ছিতা চিত্রাঙ্গদার সম্ভ্রম রক্ষা করতে

গাণ্ডীব তোলো

হে তৃতীয় পান্ডব ;

শঙ্খনাদে প্রতিধ্বনিত হোক ভোরের ভৈরবী

;তোমার ধনুকের টঙ্কারে

দেশজুড়ে স্তব্ধ হয়ে যাক ধর্ষকের জান্তব উল্লাস!

– কবি সুকান্ত লাহা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *