–শুভাশিস মজুমদার:
আবার মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ে কোপ পড়লো মোদি সরকারের আমলে। বর্তমানে ক্রমবর্ধমান মূল্য বৃদ্ধির হার যা কিনা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্ধারিত সহনসীমা (টলারেন্স লেভেল)৬%, এমনকি আর বি আই -এর মূল্যবৃদ্ধির পূর্বাভাসকে ইতিমধ্যেই ছাপিয়ে গিয়ে এই বছর জানুয়ারিতে ৬.০১%, ফেব্রুয়ারিতে ৬.০৭%, মার্চে ৬.৯৫% এবং এপ্রিলে ৭.৭৯% হয়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পাইকারি মূল্য সূচক যা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে এপ্রিলে ১৫.০৮ শতাংশে পৌঁছেছে। আর বি আই নির্ধারিত খুচরো মূল্যবৃদ্ধির সীমা ২ – ৬ শতাংশ। জ্বালানির দাম আরো বৃদ্ধি পেলে, স্বাভাবিক ভাবেই মূল্যবৃদ্ধি আরো বেশি হবে।
এমতাবস্থায় পি এফ -এর সুদের হার পূর্ববর্তী ৮.৫% থেকে কমিয়ে ৮.১% করে কার্যত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সঞ্চয় অনেকটা কমিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হল। এই হার ১৯৭৭ সালের পরে বা বিগত ৪৪ বছরে সর্বনিম্ন। ১১ ও ১২ মার্চ গুয়াহাটিতে ইপিএফও বোর্ডের একটি বৈঠক হয়। সেখানে পিএফ-এর সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছেন দেশের ৬ কোটি বেতনভোগী কর্মচারী। কর্মজীবী মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ের পরিমাণ কমতে চলেছে এর জেরে। পি এফ -এর নিয়ম অনুসারে, একজন কর্মচারীর মূল বেতনের কমপক্ষে ১২ শতাংশ বাধ্যতামূলকভাবে প্রভিডেন্ট ফান্ডে সঞ্চয় করার জন্য কেটে নেওয়া হয়। একজন নিয়োগকর্তাকেও আরও ১২ শতাংশ অনুদান দিতে হয় কর্মচারীর পিএফ অ্যাকাউন্টে।
২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে ইপিএফও তার গ্রাহকদের ৮.৮ শতাংশ হারে সুদ প্রদান করেছিল। তার পরে এই সুদ ক্রমশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সুদ হ্রাসের হিসেব ধরলে প্রতি এক লাখ টাকায় একজন গ্রাহক আগামী ২০ বছরে ৪০,৫০০ টাকারও বেশি কম সঞ্চয় করবেন। আর, ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষের সুদের হার ৮.৮% এর সঙ্গে তুলনা করলে একজন গ্রাহকের প্রতি এক লাখ টাকায় ২০ বছরে ৭৩,০০০ টাকারও বেশি সঞ্চয় কম হবে। ২৫ বা ৩০ বছর ধরে হিসেব করলে প্রতি এক লাখ টাকায় এই সঞ্চয় হ্রাসের পরিমান দাঁড়াবে যথাক্রমে ১,১৯,০০০ এবং ১,২৩,০০০ টাকার মত (এই হিসেব সুদের হার ৮.১% অপরিবর্তিত থাকবে ধরে করা)। উল্লেখ্য, এই সঞ্চয় অবসর জীবনে কাজে আসে। এই তহবিলের ১৫% টাকা সরকারের সম্মতিতে মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে শেয়ার মার্কেটে লগ্নি হয়েছিল। গত বছর মিউচুয়াল ফান্ড ভালো রিটার্ন দিলেও গ্রাহকরা তার ভাগ থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে বলে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
ইতিমধ্যে স্বল্প সঞ্চয়ে সুদের হার কমে যাওয়ায় গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ, বিশেষত অবসরপ্রাপ্ত মানুষেরা যথেষ্ট অসুবিধায় আছেন।অথচ মোদি সরকারের কোনো হেলদোল নেই ।