হিন্দু মহাসভা ও আর এস এস কখনও স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেয়নি , এখন এদের বংশধররা “ভারত ছাড়ো” আন্দোলনের নাম নিচ্ছে।

শান্তনু দত্তচৌধুরী

নরেন্দ্র মোদীর বিজেপির শাসনে আজ আমাদের দেশ এক গভীর সঙ্কটের মধ্যে নিমজ্জিত হয়েছে। উত্তর পূর্ব ভারতের মণিপুর রাজ্য আজ জাতিদাঙ্গাতে ক্ষত বিক্ষত রক্তাক্ত। প্রধানমন্ত্রী মোদী একবারও মণিপুর যাবার প্রয়োজন মনে করেননি। বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্ট গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করায় ৩ মে গণ্ডগোল শুরু হওয়ার ৭৮ দিন পর একবার ৪০ সেকেন্ডের জন্য মুখ খুলেছিলেন। ব্যাস ওই পর্যন্তই। এখন গণ্ডগোল শুরু করা হয়েছে হরিয়ানায়। দেশে ভয়ঙ্কর বেকারি , মূল্যবৃদ্ধি , অর্থনৈতিক দুর্দশা। এই সব চাপা দেবার জন্য মোদী এখন মহাত্মা গান্ধীর ডাকে যে ওইতিহাসিক “ভারত ছাড়ো আন্দোলন ” হয়, তার নাম নিচ্ছেন। দেশের সব চাইতে বড় দুর্নীতিবাজ পার্টি বলছে “দুর্নীতি ভারত ছাড়ো। ”

দেশের বিশাল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্প , নৌ বন্দর, বিমান বন্দর, খনি , বন জঙ্গল এই সব যারা জলের দরে তুলে দিল ধান্ধাবাজ পুঁজিপতিদের হাতে, এখন তারা বলছে “দুর্নীতি ভারত ছাড়ো ?” হাস্যকর। হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি আগষ্ট আন্দোলনে যোগ দেয়নি। এখন তাদের বংশধর বিজেপি আগষ্ট আন্দোলনের নাম নিচ্ছে। কোনও সম্প্রদায় ভিত্তিক দলই স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেয়নি।মুসলিম লিগ, হিন্দু মহাসভা ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ, এদের ইতিহাস এরা কখনও এই সংগ্রামে যোগ দেয়নি।সাভারকর ও গোলওয়ালকর নির্দেশিত পথে হিন্দু মহাসভা ও আর.এস.এস ওই সময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে হিন্দু যুবকদের যোগ দেওয়ার জন্য প্রচার চালাচ্ছিল।হিন্দু মহাসভার সর্ব ভারতীয় সভাপতি তখন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।

তিনি ওই সময় বাংলায় ফজলুল হকের সঙ্গে জোট গঠন করে মন্ত্রীত্ব করছিলেন।মনে রাখতে হবে ভারতবাসীর মতামত না নিয়ে বিশ্বযুদ্ধে ভারবাসীকে জড়িয়ে দেওয়ার যে ঘোষণা বড়লাট লিনলিথগো করেছিলেন, তার প্রতিবাদে ৮ টি রাজ্যের কংগ্রেস সরকার পদত্যাগ করে।কংগ্রেসের স্লোগান ছিল যুদ্ধে ‘ না এক ভাই , না এক পাই ‘ ।

এই সুযোগে হিন্দু মহাসভা ও মুসলিম লীগ হাত মিলিয়ে সিন্ধ ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে কোয়ালিশন সরকার গঠন করে।যাই হোক শ্যামাপ্রসাদ ২৬ জুলাই, ১৯৪২ তারিখে বাংলার গভর্নর জন আর্থার হারবার্ট কে চিঠি দিয়ে বলেন আগস্ট আন্দোলনের বিরুদ্ধে তাঁরা সরকারের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করবেন।তিনি লেখেন:–The question is how to combat this movement (Quit India) in Bengal? The administration of the province should be carried on in such a manner that in spite of the best efforts of the Congress, this movement will fail to take root in the province. It should be possible for us, especially responsible Ministers, to be able to tell the public that the freedom for which the Congress has started the movement, already belongs to the representatives of the people. In some spheres, it might be limited during the emergency. Indians have to trust the British, not for the sake for Britain, not for any advantage that the British might gain, but for the maintenance of the defense and freedom of the of the province itself. You, as Governor, will function as the constitutional head of the province and will be guided entirely on the advice of your Ministers

সংঘের জীবনে অপরিসীম প্রভাব বিস্তার করেন দ্বিতীয় সরসংঘ চালক মাধব সদাশিবরাও গোলওয়ালকর। ১৯৪০ সালে ডাক্তার হেডগেওয়ারের প্রয়াণের পর তিনিই সংঘ প্রধান হন। তাঁকে সংঘের সদস্যরা ‘পূজনীয় গুরুজি,’ বলে উল্লেখ করেন। আগস্ট আন্দোলনের সময় গুরুজি সাফল্যের সঙ্গে সংঘের স্বয়ং সেবকরা যাতে কোনো আন্দোলনে যোগ না দেন সে বিষয়ে নজর রেখেছিলেন।ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স অত্যন্ত সন্তোষের সঙ্গে তাদের রিপোর্টে বলছে’ আর.এস.এস কোনও রকম আন্দোলনে যোগ দেয়নি।তারা আইন মেনে চলছে এবং সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করছে।’ আগস্ট আন্দোলনের সময় ১৯৪৩ সালে (বাংলা ১৩৫০ ) বাংলায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়।এই দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে গোলওয়ালকর যা বলেন তা যথেষ্ট ‌চিত্তাকর্ষক।তিনি বলেছিলেন “এই দুর্ভিক্ষ ও তার পরিণতির জন্য সংঘ কাউকে দায়ী করতে ‌চায়‌না।যখন জনসাধারণ‌ এই সব ঘটনার জন্য কাউকে ‌দায়ী করতে চায় তখন তাদের যে দুর্বলতা আছে তা ফুটে ওঠে।দুর্বলের প্রতি সবলের যে অবিচার তার জন্য সবলকে দায়ী‌ করার কোনও অর্থ হয় না।এটি একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা।সংঘ (আরএসএস) অন্যদের (পড়ুন ব্রিটিশ সরকার) সমালোচনা করে তাদের মূল্যবান সময় নস্ট করতে চায় না।আমরা ‌যদি ‌জেনে থাকি যে প্রকৃতির রাজ্যে এটাই নিয়ম যে ” বড় মাছ ছোট মাছকে খাবে “, তখন বড় মাছের ওপর দোষ চাপানো এক রকম বাতুলতা।প্রকৃতির নিয়ম (Law of Nature ) তা ভালো খারাপ ‌যাই হোক তা সব যুগেই সত্য। এই নিয়মকে বেঠিক (Unjust) বলে পরিবর্তন করা যায় না।”

মজুতদার , কালোবাজারি ও তাদের পৃষ্ঠপোষক ব্রিটিশ সরকার সম্পর্কে এই ছিল গোলওয়ালকর ও সংঘের দৃষ্টিভঙ্গি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *