অমিতাভ সিংহ
সুপ্রীম কোর্টের রায়ের পর জল্পনা ছিল লোকসভার স্পীকার কবে রাহুল গান্ধীর সাংসদপদ ফেরাবেন।গত শুক্রবার এই রায় দুপুরের মধ্যেই মানুষ জেনে যান।আশা করা গিয়েছিল যে দ্রুততার সাথে রাহুলের সাংসদপদ খারিজ ও তাকে বাংলো ছাড়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল ততটা দ্রুততায় কতৃপক্ষ তার সাংসদপদ ও বাংলো ফিরিয়ে দেবেন।কিন্তু তা না হলেও কংগ্রেস তথা ইন্ডিয়া জোটের সার্বিক চাপে অবশেষে আজ সকালে লোকসভার সচিবালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রাহুলের সাংসদপদ ফিরিয়ে দেওয়া হল।এখন বাংলো কবে ফিরিয়ে দেওয়া হয় তার দিকে চোখ বিরোধীদের।আজ দুপুর বারোটার কিছু আগে রাহুল সংসদ চত্বরের গান্ধী মূর্ত্তিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিরোধী জোটের সাংসদের তুমুল সম্বর্দ্ধনার মধ্যেই সংসদে পা রাখেন।আশা করা যায় তিনি আগামীকাল থেকে আরম্ভ হওয়া সরকারের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে অংশগ্রহন করবেন।এর ফলে বিজেপির ওপর যে চাপ তৈরী হয়েছে তা বলাই বাহুল্য।চার মাস পর সাংসদপদ ফিরে পাওয়াকে কংগ্রেস সত্যের জয় বলে মনে করছে। একই সাথে এই রায় কর্মীদের মনোবল যে অনেকটাই বাড়িয়ে দেবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।তাই এদিন সোনিয়া গান্ধীর বাসভবনের সামনে একদল কংগ্রেস কর্মীরা গান গেয়ে ও নেচে আনন্দ প্রকাশ করেন।তাদের মুখে স্লোগান ছিল এ ঘৃণার বিরুদ্ধে ভালবাসার জয়। গত শুক্রবার মানহানি সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রীম কোর্টে বড় জয় পেয়েছিলেন রাহুল গান্ধী।
রাহুল গান্ধি চার বছর আগে কর্নাটকে এক নির্বাচনী জনসভায় বলেছিলেন “ধরা পড়া সব চোরদের পদবী কেনো মোদি ?” এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গুজরাটের এক বিজেপি বিধায়ক পূর্নেশ মোদি রাহুল গান্ধির বিরুদ্ধে সুরাটের এক ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মানহানির মামলা করে। তাঁর বক্তব্য ছিল রাহুল সমগ্র মোদী সমাজের মানহানি করেছেন। ওই বিজেপি বিধায়কের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ওই ম্যাজিস্ট্রেট রাহুল গান্ধিকে দোষী সাব্যস্ত করে। ওই ম্যাজিস্ট্রেটের মত রাহুল গান্ধি বিরলতম অপরাধ করেছেন ও এক্ষেত্রে যে সর্বাধিক শাস্তি আছে , তাঁকে সেই দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হল।এই রায় কার্যকর হবার পর অর্থাৎ দুবছরের সাজা ভোগ করার পর রাহুল গান্ধি আরো ৬ ( ছয়) বছর নির্বাচনে দাঁড়াতে পারতেন না। এই রায় এর বিরুদ্ধে শ্রী গান্ধীর আবেদন সেশন কোর্ট ও গুজরাতের হাই কোর্ট খারিজ করে। এরপর কেটে গেছে চার চারটি বছর।রাহুল গান্ধী মোদী সরকারের গণতন্ত্র হত্যা থেকে বিভিন্ন দুর্নীতি নিয়ে ক্রমাগত সরব থেকেছেন।সাম্প্রতিকালে আদানী কেলেঙ্কারি সামনে আসার পর তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন আদানীর সঙ্গে মোদীর কি সম্পর্ক।বার বার এই প্রশ্ন করা সত্ত্বেও এর জবাব মোদী দিতে ব্যর্থ হওয়ার পর খোদ সংসদেও একই প্রশ্ন তোলার প্রস্তুতি হয়।ঠিক তখনই পূর্ণেশ মোদির এই মামলাটিকে আবার তোলা হয় এবং নিম্ন আদালতের বিচারপতি রাহুলকে মানহানি মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি দেন। তার ফলে তাঁর সংসদের সদস্যপদ চলে যায় ও সাংসদদের যে বাসস্থান তাও ছাড়তে তড়িঘড়ি নির্দেশ জারি করে লোকসভা সচিবালয়। রাহুল গান্ধী বিনা বাক্যবায়ে তা ছেড়েও দেন।
এরপর গুজরাট হাইকোর্টও এই রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দেয় নি।ফলে তিনি সুপ্রীম কোর্টের শরণাপন্ন হন। আজ বেঞ্চের তিন বিচারপতি বিআর গাভাই, পিএস নরসীমা ও পিভি সঞ্জয় কুমার যাবতীয় সওয়াল জবাব শোনার পর নিম্ন আদালতের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করতে গিয়ে বলেন আমরা মামলার ভিত্তি নিয়ে কোন মন্তব্য করছি না কিন্তু তাঁদের এই পর্যবেক্ষণ ছিল যে নিম্ন আদালতের বিচারক কোনও নির্দিষ্ট কারন দেননি, কেন তিনি সর্বোচ্চ শাস্তি দিচ্ছেন, কারণ শাস্তির মেয়াদ একদিন কম হলে রাহুল গান্ধীর সাংসদপদ খারিজ হত না। গুজরাট হাইকোর্ট এই মামলা ঘিরে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা বেশ দীর্ঘ ছিল। আর সেই দীর্ঘ ১০০ পৃষ্ঠার নির্দেশপত্র দেখে বেশ খানিকটা বিরক্ত হয় সুপ্রিম কোর্ট। নির্দেশ এতটা লম্বা কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা। সুপ্রিম কোর্ট বলছে, ‘ আমরা এই বিষয়ে এতটা দীর্ঘ নির্দেশের কারণ বুঝতে পারলাম না। গুজরাট হাইকোর্ট ১০০ পাতার রায় দিয়েছে। এত লম্বা রায় লেখা হাইকোর্টের অদ্ভুত ব্যাপার।’ সুপ্রিম কোর্ট বলেন, গুজরাতের হাই কোর্ট রাহুল গান্ধীর নৈতিক পতন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁর সাংসদ হিসেবে কেমন আচরণ হওয়া উচিৎ তা বলেছে, কিন্তু কেনো তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তি তা নিয়ে একটি কথাও বলেননি। বিচারপতিরা বলেন কারো সাংসদ পদ খারিজ হলে শুধু তিনি নন, তাঁর কেন্দ্রের জনগণও যাঁরা তাঁকে ভোট দিয়েছেন, তাঁরাও বঞ্চিত হন।