মনিরুল হক
ভাতৃঘাতী দাঙ্গায় বিধ্বস্ত মনিপুরে ‘মহব্বত’- এর বাণী নিয়ে অসহায় মানুষজনের কাছে পৌঁছে গেলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। গত ২৯ জুন ইম্ফল বিমানবন্দরে নেমেই তিনি বেরিয়ে পড়েন চূড়াচাঁদপুরের উদ্দেশ্যে। এই চূড়াচাঁদপুর থেকেই ৩ মে হিংসার সূত্রপাত হয়। যাত্রাপথে সাধারণ মানুষ বিশেষত: মহিলারা রাহুল গান্ধীকে স্বাগত জানান। কিন্তু পথিমধ্যে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে বিষ্ণুপুরে প্রশাসনের তরফ থেকে রাহুলের কনভয় আটকে দেওয়া হয়। সেখানে জড়ো হওয়া মানুষ রাহুলকে রাস্তা ধরেই চূড়াচাঁদপুর যাওয়ার অনুরোধ করেন কারণ তাঁদের মতে, তাহলে রাহুল দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চল গুলি দেখতে পাবেন। এবং এই দাবিতে সাধারণ মানুষ পুলিশ-প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করলে পুলিশ কাঁদনে গ্যাস ছুঁড়ে জনতাকে নিবৃত্ত করেন। বাধ্য হয়ে রাহুল ইম্ফল ফেরেন এবং হেলিকপ্টার নিয়ে চূড়াচাঁদপুর পৌঁছান।চূড়াচাঁদপুরে রাহুল দুটি ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করেন। তার একটি হল তুইবং গ্রীনউড শিবির। এখানে থাকা ছোট ছেলেমেয়েদের সাথে বসে তিনি দুপুরের খাবারও খান। অন্য যে শিবিরে যান সেটি হল হিয়াংতাম লামফা সরকারী কলেজ শিবির। শিবির দুটিতে অবস্থানরত পুরুষ-মহিলাদের সাথে তিনি কথা বলেন, তাঁদের দুর্দশার কথা শোনেন এবং কোনো সমস্যা থাকলে তাঁর সহকর্মীদের কাছে জানিয়ে রাখতে বলেন। এখানে কুকি-জো সম্প্রদায়ের সম্মিলিত সংগঠন INDIGENOUS TRIBAL LEADERS’ FORUM রাহুল গান্ধীকে এক স্মারকলিপি দেন। সেই স্মারকলিপিতে বলা আছে, “এই সংঘর্ষ দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির থেকে স্বত:স্ফুর্তভাবে শুরু হয়েছে তা নয়, এটা হয়েছে বীরেন সিং পরিচালিত সরকার ও তার সহযোগীদের একটি পরিকল্পনা অনুযায়ী যার উদ্দেশ্য সংখ্যাগরিষ্ঠের দ্বারা উপজাতিদের জমি দখল করা ও তাদের শেষ করে দেওয়া”।পরে রাহুল বলেন, তিনি মনিপুরের অসহায় মানুষের প্রতি সহমর্মী তাই তাঁদের পাশে দাঁড়াতেই এখানে এসেছেন। তিনি বলেন, তিনি এসেছেন মনিপুরে ঠিক কি ঘটেছে তা জানতে, শুনতে ও বুঝতে এবং সব সম্প্রদায়ের মানুষই তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু সরকার তাঁকে বাধা দিচ্ছেন।৩০ জুন রাহুল মৈরাং-এ যান। সেখানে তিনি দুটি শিবির পরিদর্শন করেন। এখানে আছেন মৈতেই সম্প্রদায়ের মানুষ। সেখানে তাঁকে দেখে কেউ জড়িয়ে ধরেন, কেউ কেঁদে কেঁদে তাঁর দু:খের কথা বলেন। রাহুল আন্তরিকতার সঙ্গে তাঁদের কথা শোনেন। এরপর রাহুল মৈরাং নেতাজি সুভাষ স্মারকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তারপর ইম্ফল ফিরে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। এখানে বিশিষ্ট জনেদের পাশাপাশি নাগা কাউন্সিল, মৈতেইদের সম্মিলিত সংগঠন COCOMI সহ ১০ টি সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এখানেও রাহুল রাজ্যে শান্তি ফেরানোর জন্য সবাইকে অনুরোধ জানান।এরপর রাহুল গান্ধি রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল অনুসূইয়া উইকের সাথে দেখা করেন এবং মনিপুরের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন।দু’দিন মনিপুর অবস্থান কালে রাহুল কোনো দলীয় রাজনীতির কথা বলেন নি, রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের যাচ্ছেতাই রকমের খারাপ ভুমিকা নিয়েও কোনো সমালোচনা করেন নি। শুধু বলেছেন, শিবির গুলিতে কিছু সমস্যা আমি লক্ষ্য করেছি। কোথাও খাবার, কোথাও ওষুদের অভাব আছে; সরকার ব্যবস্থা নিক।রাহুল গান্ধি কিছু না বললেও কংগ্রেস দল সরকারের ভুমিকার কড়া সমালোচনা করেছে। বলেছে, অনেকে মনে করেছিলেন, বিদেশ থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রী একবার অন্তত: মনিপুর যাবেন। তিনি তো গেলেন না, দাঙ্গার ৫৬ দিন পরেও মনিপুর নিয়ে একটা কথাও বললেন না। শুধু তাই নয়, রাহুল গান্ধি যখন অসহায় মনিপুরবাসীর পাশে থাকার জন্য যাচ্ছেন তখন তাঁর পথ আটকানো হচ্ছে, অসহায় আর্ত মানুষের কাছে তিনি যাতে না যেতে পারেন তার চেষ্টা করা হচ্ছে। কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, অসহায় মানুষের ক্ষতে শান্তির পরশ দেওয়া কি অপরাধ? দু:খী মানুষের চোখের জল মোছানো কি অপরাধ? কংগ্রেসের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনেত বলেছেন- আপাদমস্তক ঘৃণায় ভরা এক স্বৈরতন্ত্রী ভালোবাসার পরশকে ভয় পেয়েছে।—-